জঙ্গির গুলিতে ঝাঝরা দার্জিলিংয়ের ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা, "দেশের জন্য শহিদ"- গর্বিত বাবা
জঙ্গীদের গুলিতে শহিদ হলেন রাজ্যের এক বীর সেনা জওয়ান। সোমবার সন্ধ্যায় জম্মু-কাশ্মীরের ডোডায় সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হয়েছেন দার্জিলিংয়ের লেবংয়ের বড়াগিঙ্গের বাসিন্দা ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপা। ক্যাপ্টেনের বয়স হয়েছিল মাত্র ২৭ বছর। ব্রিজেশ থাপার মৃত্যুতে শোকের ছায়া গোটা শৈলশহরে।ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধেয় ডোডা থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে দেশা বনাঞ্চলের উরারবাগীতে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের যৌথ অভিযান শুরু হয়। এনকাউন্টার শুরু হলে সন্ত্রাসবাদীরা পালানোর চেষ্টা করে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তাদের তাড়া করেন সেনার একটি দল৷ রাত ৯টা নাগাদ ফের এনকাউন্টার শুরু হয়। গুরুতর আহত হন এক গ্রুপ ক্যাপ্টেন-সহ চার সেনা জওয়ান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয়৷ আরেক সেনা জওয়ানের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। শহিদের মধ্যে একজন দার্জিলিং এর ব্রিজেশ থাপা। সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে অফিসার-সহ চার সেনা সদস্য এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের সদস্য আহত হয়েছেন৷ প্রাথমিকভাবে ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে এনকাউন্টার চলে। ব্রিজেশ থাপার শহিদ হওয়ার খবর ইতিমধ্যে সেনা আধিকারিকদের তরফে তাঁর পরিবারকে জানানো হয়েছে।পরিবার সূত্রে খবর, ১৭ জুলাই অর্থাৎ বুধবার ব্রিজেশের দেহ বিশেষ বিমানে শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে আনা হবে। এরপর তাঁকে বাগডোগরা সেনা ছাউনিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভিবাদন জানানো হবে। সেখান থেকে তাঁর দেহ সড়কপথে দার্জিলিংয়ের লেবংয়ে তাঁর জন্মভূমিতে নিয়ে যাওয়া হবে। ব্রিজেশের বাবা কর্নেল ভুবনেশ থাপা বলেন, ছোট থেকেই ব্রিজেশের সেনার প্রতি খুব টান ছিল। নিজেকে সেইভাবেই তৈরি করেছিল। কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আক্ষেপ নেই। আমার সন্তান দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন।জানা গিয়েছে, ব্রিজেশের বাবা কর্নেল ভুবনেশ থাপা ২০১৪ সালে সেনা থেকে অবসর নেন। বর্তমানে তিনি দার্জিলিংয়ের লেবংয়েই এক্স সার্ভিসম্যান হেলথ সার্ভিস স্কিমে কর্মরত রয়েছেন। ব্রিজেশের বাড়িতে সদস্য বলতে বাবা ছাড়াও রয়েছেন মা নীলিমা থাপা ও দিদি নিকিতা থাপা। নিকিতা থাপা বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় সঙ্গীত নিয়ে পড়াশুনো করছেন। ভাইয়ের শহিদ হওয়ার খবর পেতেই তিনিও বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।ব্রিজেশ থাপার জন্ম লেবংয়ে ৷ তিনি প্রাথমিক পড়াশুনো করেন দার্জিলিংয়ে৷ তবে বাবার সেনায় অন্যত্র পোস্টিংয়ের কারণে ব্রিজেশ বাকি পড়াশুনো রাজ্যের বাইরে থেকেই সারেন। শেষে মুম্বই থেকে নিজের উচ্চশিক্ষা শেষ করেন তিনি। সেখানকার কলেজ থেকে বিটেক শেষ করে কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন। ২০১৮ সালে তিনি ওই ডিফেন্স সার্ভিসের শর্ট সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় পাশ করেন ও ২০১৯ সালে সেনাতে যোগ দেন।ব্রিজেশ দুবছর ১০ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের মোতায়েন ছিলেন। এরপর তাঁকে এক্সট্রা রেজিমেন্টাল ডিউটির জন্য ভারতীয় সেনার বিশেষ বিভাগ ১৪৫ আর্মি এয়ার ডিফেন্সের অধীন জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডা সেনা ছাউনিতে বদলি করা হয়। সেখানে ব্রিজেশ থাপা এ-কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন। নিজের ট্রুপ নিয়ে ডোডা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা দুরত্বে একটি অভিযানে যাওয়ার সময় আচমকা তাঁদের উপর হামলা হয়। আর সেই হামলাতেই প্রাণ হারান ব্রিজেশ।